আল্লাহ তা’আলা তার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন। দ্বীনের প্রতিটি বিষয়কে স্পষ্ট করেছেন, তার প্রিয় রাসূলের আদর্শে যা বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্বীনের এমন কোনো বিষয় নেই যাতে ধোঁয়াশা আছে বা সন্দেহের জায়গা আছে। তবুও মানুষ তার নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে দ্বীনের মাঝে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তিমূলক বিষয়ের আবির্ভাব ঘটায়, যা কখনই এই দ্বীনের আন্তর্ভুক্ত ছিল না। এভাবেই দ্বীনের ভেতর নতুন উদ্ভাবন বা বিদআতের সূচনা হয়।
ভাষাগত দিক থেকে আরবি ‘বিদ’আহ’ শব্দের অর্থ, “অভূতপূর্ব বা নজিরহীন উদ্ভাবন”। যেমন আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ
“তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের উদ্ভাবক।” [সূরা বাকারা- ১১৭]
قُلۡ مَا كُنتُ بِدۡعٗا مِّنَ ٱلرُّسُلِ
বল, আমি রসূলদের মধ্যে নতুন নই। [সূরা আহকাফ- ০৯]
এসকল আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে আল্লাহ তা’আলা বিদআহ শব্দটি তার নিজের ও রাসূল ﷺ এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ আসমান ও জমিনের বিদআহ (উদ্ভাবন) করেছেন, আর তার রাসূলের ব্যাপারে বলেছেন তিনি বিদ’আহ নন। অর্থাৎ রাসূল ﷺ মানবজাতির প্রতি প্রেরিত প্রথম রাসূল নন, তার পূর্বেও অসংখ্য রাসূল এসেছে।
বিদআত দুই ধরনের হতে পারে।
এক. মানুষের মাঝে প্রচলিত রীতিনীতি যেমন আধুনিক প্রযুক্তিসমূহের ব্যবহার । এই ধরনের উদ্ভাবন অবশ্যই অনুমদিত, যেহেতু সামাজিক রীতিনীতি সাধারণভাবে অনুমদিত, যদি তা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।
দুই. দ্বীনের ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবন, এই ধরনের উদ্ভাবন অনুমদিত নয়। কেননা এই দ্বীন সরাসরি আল্লাহ প্রদত্ত ওহির মাধ্যমে সংরক্ষিত।
এ বিষয়ে আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন,
عَنْ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ عَبْدِ اللَّهِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم “مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন: যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় সংযুক্ত করবে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে (অর্থাৎ তা গ্রহণযোগ্য হবে না)। [বুখারী: ২৬৯৭]
অন্য বর্ণনায়, যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যা আমাদের দ্বীনে নেই, তা গ্রহণযোগ্য হবে না (অর্থাৎ প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে)। [মুসলিম: ১৭১৮]
বিদআতের শ্রেণিবিভাগ দুইটি—
১. মৌখিক বিদআত: জাহমিয়া, মু’তাজিলা, রাফিদাহ এবং অন্য সকল বিভ্রান্ত দলগুলো এই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
২. আমলি বিদআত: এমন যেকোনো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান যা আল্লাহ করতে আদেশ করেননি, বা রাসূল ﷺ -এর সুন্নত বহির্ভূত তা এর অন্তর্ভুক্ত। এর কিছু উদাহরণ নিচে উল্লেখ করা হলো—
ক. এমন কোনো ইবাদতের সূচনা করা যা আল্লাহ তা’আলা আদেশ করেন নি, যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ব্যতিত অতিরিক্ত সালাত আদায় করা, যা কুরআন ও সুন্নাতে পাওয়া যায় না। ফরজ রোজা ব্যতিত অন্য রোজাকে ফরজ মনে করে রাখা, বিভিন্ন উৎসব উদ্যাপন করা যা ইসলামের অংশ নয়।
খ. বিদ্যমান ইবাদতে অতিরিক্ত করা, যেমন, যোহরের চার রাকাত নামাজের স্থানে পাঁচ রাকাত আদায় করা।
গ. আল্লাহর রাসূল ﷺ -এর শেখানো পদ্ধতি ব্যতিত অন্য পদ্ধতিতে ইবাদত করা, যেমন— সালাতের পর তাসবিহসমূহ সুর তাল দিয়ে একত্রে পাঠ করা, সুন্নাহ ব্যতিত কোনো আমলে অতিরিক্ত করা ইত্যাদি।
ঘ. কোনো নির্দিষ্ট সময়ের ইবাদতকে অধিক বরকতপূর্ণ মনে করা, যদিও তাঁর পক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে কোনো প্রমান পাওয়া না যায়। যেমন— মিরাজের রাতে ইবাদত, শাবানের মধ্য রজনীতে নির্ধারিত ইবাদত ইত্যাদি। ১৫ শাবানের রাত যদিও বরকতপূর্ণ তবে এ রাতের কোনো নির্ধারিত ইবাদতের কথা উল্লেখিত নেই।
বিদআত বিস্তার লাভের কারণ:
নিঃসন্দেহে কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বিদআত ও পথভ্রষ্টতা থেকে ঢালস্বরূপ কাজ করে। আল্লাহ ﷻ পবিত্র কুরআনে বলেন,
وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ
আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমারা তাকওয়ার অধিকারী হও।
[সূরা আন-আম -১৫৩]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ বলেন, “আল্লাহর রাসূল ﷺ ‘এ পথ আল্লাহর সরল পথ’ বলার পর আমাদের সামনে একটি সরল রেখা আঁকেন। তারপর তিনি এর ডানে ও বামে আরও কিছু লাইন আঁকেন, তারপর বলেন, এমন অনেক পথ আছে যেখানে শয়তান মানুষকে আহ্বান করে। তারপর আল্লাহর রাসূল ﷺ এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।”
তাই যে কেউ কুরআন এবং রাসূলের সুন্নাহ থেকে দূরে সড়ে যাবে সে বিদআতের কবলে পড়ে যাবে এবং পথভ্রষ্ট দলগুলোর অনুসারী হবে।
মুসলিম সমাজে বিদআতের প্রচার প্রসারের পিছনে বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান এর মধ্যে কিছু বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো:
১) ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব: সময়ের সাথে সাথে মুসলিমরা রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ হতে দূরে সরে যেতে থাকে, তার শিক্ষা ভুলে যেতে থাকে এবং অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন,
وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اختِلافاً كَثيراً
“তোমাদের মধ্যে যে কেউ আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে।”
(আবু দাঊদ ৪৬০৯, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪২)
তিনি আরও বলেন,
إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ
‘‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে’’।
তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا
‘‘আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইল্মকে টেনে বের করে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইল্ম, উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবেনা তখন লোকেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বিনা ইলমেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরকেও গোমরাহ করবে’’। [বুখারি, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম]
বিদআত বিস্তার লাভে অন্যতম প্রধান বাধা হচ্ছেন আমাদের আলেমগণ, তারা সর্বদা বলিষ্ঠ কণ্ঠে দ্বীনের বিকৃতির বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা লাভ পালন করেছেন। তাই যখন ইল্ম ও আলেম হ্রাস পাবে, সমাজে বিদআত বৃদ্ধি পাবে।
২) নিজের নফসের অনুসরণ: যে কেউ পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার নফস্ (প্রবৃত্তি) তাকে ধরাশায়ী করবে, তার সমস্ত কাজ তখন নফসের হুকুম মোতাবেক হবে।
আল্লাহ ﷻ পবিত্র কুরআনে বলেন,
فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا۟ لَكَ فَٱعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَآءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ بِغَيْرِ هُدًۭى مِّنَ ٱللَّهِ ۚ
“অতঃপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয় তাহলে জানবে যে, তারা শুধু নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আল্লাহর পথ-নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে সে অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে?”
[সূরা কাসাস: ৫০]
أَفَرَءَيۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَٰهَهُۥ هَوَىٰهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلۡمٖ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمۡعِهِۦ وَقَلۡبِهِۦ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِۦ غِشَٰوَةٗ فَمَن يَهۡدِيهِ مِنۢ بَعۡدِ ٱللَّهِۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
তুমি কি লক্ষ্য করেছ তার প্রতি যে তার খেয়াল-খুশিকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন আর তার কানে ও দিলে মোহর মেরে দিয়েছেন আর তার চোখের উপর টেনে দিয়েছেন পর্দা। অতঃপর আল্লাহর পর আর কে (আছে যে) তাকে সঠিক পথ দেখাবে? এরপরও কি তোমরা শিক্ষাগ্রহণ করবে না? [সূরা জাসিয়া: ২৩]
তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, যারা বিদআতে লিপ্ত তারা এসব ছাড়াও অসংখ্য ব্যক্তিগত গুনাহে লিপ্ত, নফসের অনুসরণই তাদেরকে দ্বীনের বিকৃতি ঘটিয়েছে। আল্লাহ আমাদের নফসের অনুসরণ থেকে হেফাজত করুন।

৩) কোনো নির্দিষ্ট মতবাদ বা ব্যক্তির অনুসরণ: গোঁড়ামি ও অন্ধবিশ্বাস অনেক সময় মানুষকে স্পষ্ট প্রমাণসহ আসা সত্যকেও গ্রহণ করতে বাধা প্রদান করে। মানুষ তার মানসজগতে যে বিষয়কে সত্য হিসেবে ধরে নিয়েছে এর বাইরে সে অন্য কোনো সত্যকে মেনে নিতে পারে না। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে ইকো চেম্বার (Echo Chamber) বলা হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱتَّبِعُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُواْ بَلۡ نَتَّبِعُ مَآ أَلۡفَيۡنَا عَلَيۡهِ ءَابَآءَنَآۚ
“যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা ঐ জিনিসের অনুসরণ কর যা আল্লাহ নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে, বরং আমরা তারই উপর চলব, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি।” [সূরা বাকারা: ১৭০]
বর্তমানে সুফিবাদের কিছু ধারা এবং কবরপূজারিদের অবস্থা হচ্ছে এমন, যখন তাদেরকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল ﷺ -এর সুন্নাহ অনুসরণ করার প্রতি আহ্বান করা হয় তারা তাদের পিরদের আঁকড়ে ধরে থাকে এবং পূর্বপুরুষদের প্রথাকেই অনুসরণ করে যায়।
৪) অবিশ্বাসীদের অনুকরণ: বিদআতের দিকে ধাবিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো অবিশ্বাসীদের অনুসরণ।
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا خَرَجَ إِلَى خَيْبَرَ مَرَّ بِشَجَرَةٍ لِلْمُشْرِكِينَ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ أَنْوَاطٍ يُعَلِّقُونَ عَلَيْهَا أَسْلِحَتَهُمْ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم “ سُبْحَانَ اللَّهِ هَذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوسَى : اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ
আবূ ওয়াকিদ আল-লাইসী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, হুনাইনের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাত্রা শুরু করলেন। তিনি মুশরিকদের একটি গাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই গাছটিকে যাতু আনওয়াত’ বলা হতো। তারা এর মধ্যে তাদের অস্ত্রসমূহ লটকিয়ে রাখত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তাদের যাতু আনওয়াতের মতো আমাদের জন্য একটা যাতু আনওয়াতের ব্যবস্থা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! এটা তো মূসা (আঃ)-এর উন্মাতের কথার মতো হলো। তারা বলেছিল, কাফিরদের যেমন অনেক উপাস্য রয়েছে তদ্রুপ আমাদেরও উপাস্যের ব্যবস্থা করে দিন। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীগণের নীতি অবলম্বন করবে। [তিরমিজি]
উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে, বনি ইসরাইলের লোকেদের মত এই উম্মতের একটা অংশ অবিশ্বাসীদের অনুকরণের মাধ্যমে দ্বীন থেকে দূরে সরে যাবে এবং আল্লাহ ব্যতিত অন্য জিনিস থেকেও বরকত আশা করবে।
বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যে কিছু লোক অবিশ্বাসীদের অনুসরণের মাধ্যমে বিদআতে লিপ্ত হচ্ছে এবং মূর্তিপূজকদের রীতিনীতি পালন করছে, যেমন- জন্মদিন উদ্যাপন করা, ভাস্কর্য নির্মান, স্মৃতিস্তম্ভ, শহিদ মিনার স্থাপন করা। তাছাড়া জানাজাতেও তারা নতুন রীতিনীতির উদ্ভাবন করেছে।
আমাদের শাইখ জাহেদ ফেত্তাহ حفظه الله বলেন, যেকোনো আমল আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার জন্য দুটি শর্ত মানা প্রয়োজন,
এক. আমলের নিয়ত হতে হবে এক আল্লাহর জন্য, দুই. আমলের পদ্ধতি হবে রাসূল ﷺ -এর সুন্নাহ মোতাবেক।
এই দুই শর্তের যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে সেই আমল আল্লাহর নিকট কবুলযোগ্য হবে না। তাই বিদআত থেকে বাঁচতে হলে একজন মুমিনের এই দুটি বিষয় সর্বদা মাথায় রাখতে হবে।
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মৌখিক ও আমলি বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুক এবং কুরআন ও সুন্নাহ মেনে আমল করার তাওফিক দান করুক।
নোট: উপরোক্ত নিবন্ধনটি শাইখ সালিহ আল ফাওযান -এর লিখা الإرشاد إلى صحيح الاعتقاد থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা হয়েছে।
No Comment! Be the first one.